↪প্রথমেই  আসি  ইন্টারনেট কি?
সহজ ভাষায় বললে, আন্তর্জাল বাইন্টারনেট হল এমন একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যেটা পুরো পৃথিবীর সকল কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে। তবে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে- কিছু কম্পিউটার একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরী করে। এভাবে পৃথিবীর অধিকাংশ কম্পিউটার একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে যে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো তৈরি করেছে, সেগুলোর সমষ্টিকেই আমরা ইন্টারনেট বলি এবং আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো একে অপরের সাথে ডেটা আদান-প্রদান করে থাকে।
অর্থাৎ আমাদের বাসায় থাকা কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসটি যদি এই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের(ইন্টারনেট) সাথে কানেক্ট থাকে, তাহলে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকলের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকা অন্য কম্পিউটারের সাথে আমরা ডেটা আদান-প্রদান করতে পারব।

↪ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

আপনি যদি কাউকে প্রশ্ন করেন ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে তাহলে অনেকেই বলবে ইন্টারনেট মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটের সাহায্যে কাজ করে নতুবা বলবে জানে না। কিন্তু ইন্টারনেট – এর ৯৯% চলে অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে অর্থাৎ তারের মাধ্যমে এবং মাত্র ১% চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।
এখন হয়ত মনে মনে আপনি ঠিক এমনটাই ভাবছেন, ‍‍‍‌‌‌‌‌‌‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌” কিসব ভুলভাল বলছে! আমিতো আমার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি কোনো প্রকার তারের সংযোগ ছাড়াই”। সত্যি বলতে, আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক যে টাওয়াটির মাধ্যমে আসছে, সেই টাওয়ার থেকে শুরু করে আপনি যে ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন তার সার্ভার পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বিছানো আছে। কি কঠিন লাগছে? তাহলে একটু সহজ ভাবে বলি।

ইন্টারনেটের যে তথ্য আমাদের কাছে এসে পৌছায় তা ৩ টি আলাদা আলাদা স্তরের মধ্য দিয়ে আসে। এই স্তরগুলোকে Tier বলা হয়। এই স্তর ৩ টি হল Tier 1, Tier 2 এবং Tier 3।

◾Tier 1 
Tier 1 হল সেই সমস্ত কোম্পানি যারা নিজেদের টাকায় সমস্ত পৃথিবীতে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ক্যাবল বিছিয়ে রেখেছে(যাদের অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল বলা হয়)। ক্যাবলগুলো চুলের মত সরু কিন্তু এরা খুব দ্রুত যেমন ১০০ থেকে ২০০ জিবিপিএস পর্যন্ত ডেটা আদান প্রদান করতে পারে। বিভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা Tier 1 কোম্পানি আছে যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ক্যাবল বিছিয়ে সারা পৃথিবীকে যুক্ত করেছে। এভাবে একটি দেশের এক প্রান্তে অপটিক্যাল ফাইভার ক্যাবলের ল্যান্ডিং পয়েন্ট থাকে ( আপনি ইচ্ছা করলেসারা পৃথিবীতে সাবমেরিন ক্যাবলের মানচিত্র দেখে নিতে পারেন।) বাংলাদেশের Tier 1 কোম্পানি হল Bangladesh Submarine Cable Company Limited )। এবার ল্যাডিং পয়েন্ট থেকে দেশকে(বাংলাদেশের ক্ষেত্রে) বিভিন্ন জেলায় এবং জেলাকে বিভিন্ন উপজেলায় Tier 2 এবং Tier 3 এই ২ স্তর ভাগ করে আপনার লোকালয়ে আপনার হাত পর্যন্ত পৌছে দেয় ইন্টারনেট।

◾Tier 2 

দেশের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে Tier 1 কোম্পানি ফাইবার ক্যাবলগুলো নিয়ে আসে। এরপর সেই দেশের বিভিন্ন কোম্পানি যেমন বাংলাদেশের গ্রামীনফোন, বাংলালিংক ইত্যাদি কোম্পানিগুলো Tier 1 কোম্পানির ক্যাবল থেকে সংযোগ নেয় এবং প্রতি জিবি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা Tier 1 কোম্পানিকে দিয়ে থাকে। তাহলে এই গ্রামীনফোন, বাংলালিংক ইত্যাদি কোম্পানিগুলো হল Tier 2 কোম্পানি।

◾Tier 3 

এলাকা ভিত্তিক কিছু ISP বা Internet Service Provider রয়েছে যাদের Tier 3 কোম্পানি বলা হয়। এরা এলাকা ভিত্তিক সার্ভিস দেয়।

↪ইন্টারনেটে বিশ্বভ্রমণ

আপনি আপনার কম্পিউটার থেকে ইচ্ছা করলে দেখতে পারেন, আপনি যদি কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন তাহলে আপনাকে কতগুলো দেশ অতিক্রম করে ওই ওয়েবসাইট – এর সার্ভারে যেতে হয়েছে। এটার জন্য আপনার কম্পিউটারের CMD ওপেন করতে হবে। তারপর tracert লিখে একটি স্পেস দিয়ে ওয়েবসাইটের লিংক যেমন  দিতে হবে। তখন বিভিন্ন আইপি দেখা যাবে।

এই আইপিগুলো  এই ওয়েবসাইটে একটু চেক করলে আপনি দেখতে পারবেন  এর সার্ভারে যাবার জন্য আপনাকে কতগুলো দেশে সংযোগ করতে হয়েছে। এভাবেই পুরো পৃথিবীতে ইন্টারনেট কাজ করে থাকে।

↪ইন্টারনেটের মালিক কে?

প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটের কোন মালিক নেই। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিজেদের টাকায় অপটিক্যাল ফাইভার ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল সমুদ্রে বিছায়।

↪ইন্টারনেটের জন্য কেমন খরচ হয়?

মনে করুন আপনার অফিসে একটি কম্পিউটার আছে। আপনার বাড়িতেও একটি কম্পিউটার আছে। আপনি এখন এই ২ কম্পিউটারের সাথে একটি ক্যাবল লাগিয়ে দিলেন। তাহলে আপনি আপনার ২ কম্পিউটারেই ইন্টারনেট সংযোগ করলেন। হ্যাঁ, এটাই ইন্টারনেট। সংক্ষেপে সমস্ত প্রক্রিয়াটা হল: মোবাইল/কম্পিউটার→নেটওয়ার্ক অপারেটর [বাংলালিংক, গ্রামীন, রবি, ইত্যাদি কিংবা ব্রডব্যান্ড]→ সাবমেরিন ক্যাবল[বলতে পারেন USB ক্যাবল]→অন্যপ্রান্তের কম্পিউটার৷৷

আসলে ইন্টারনেট ফ্রি। তাহলে ইন্টারনেটের জন্য আমরা টাকা দেই কেন? ইন্টারনেট সংযোগ দেবার জন্য যে ক্যাবল রয়েছে আর সেটা পরিচালনা করার জন্য যারা রয়েছে, টাকাটা মূলত আমরা তাদের দেই।তবে যেটুকু দরকার কম্পানি তার কয়েকগুন টাকা আমাদের থেকে নিয়ে নেয়।

কালেক্টেড ফ্রম-Infinity Science
নবীনতর পূর্বতন